TravelwhereBD

হোসেনী দালান ভ্রমন

হোসেনী দালান

ছোটবেলায় মায়ের মুখে একাধিকবার হোসেনী দালানের নাম শুনলেও কখনও নিজ চোখে দেখা হয়নি। ঢাকায় থাকা সত্ত্বেও এবং পুরোনো ঢাকা বহুবার যাতায়াত করার পরও এই স্থানটি চোখের আড়ালেই পড়ে ছিলো এতকাল। অবশেষে হটাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম হোসেনী দালান ঘুরে দেখবো। সফরসঙ্গী হিসেবে সাথে ছিলো এক বান্ধবী। প্লান করলাম ঐদিন পুরান ঢাকার আরোও কিছু পুরাতন ঐতিহ্য একসাথে দেখে আসবো। যেই কথা সেই কাজ, সকাল ১০ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য রোজ গার্ডেন, তারপর ছোট কাটরা,বড় কাটরা দেখে চলে যাবো হোসেনী দালান। 

কিভাবে যাবেন হোসেনী দালান-

হোসেনী দালানের অবস্থান পুরান ঢাকার বকশিবাজার এলাকায়। ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে আগে আপনাকে বকশিবাজার আসতে হবে। রিকশা/সিএনজি/বাস যেকোনোভাবেই বকশিবাজার যাওয়া সহজ। ঠিকানা/মৌমিতা বাস সার্ভিস সাইনবোর্ড টু গাবতলী হয়ে এই রুটে যাতায়াত করে। বকশিবাজার এলাকার বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ সংলগ্ন ডানপাশের রাস্তা দিয়ে কিছুদূর হেটে গেলেই হোসেনী দালান পেয়ে যাবেন। 

হোসেনী দালান বা ইমামবাড়া মুঘল আমলে নির্মিত শিয়া সম্প্রদায়ের একটি ইমারত।ধারনা করা হয়, মুঘল সম্রাট শাহ সুজার আমলে সৈয়দ মুরাদ এটি নির্মাণ করেন।শাহ সুজা সুন্নি মুসলিম ছিলেন বটে তবে শিয়া ধর্মের প্রতি ছিলো তার প্রবল আকর্ষণ।সৈয়দ মুরাদ কতৃক হোসেনী দালান নামকরন করা হয়েছিলো। নির্মানকালে এটি খুবই ছোট একটি ভবন ছিলো। পরবর্তীতে এটি আরও প্রশস্ত করা হয়। গেইট থেকে কিছুদূর হেটে গেলেই দেখা মিলবে মূল ভবন। কিছুটা উচুতে বেদির করা ভবনের ডান পাশে সিড়ি রয়েছে।সিড়ির নিচে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করার স্থান। অনেকগুলো মোমবাতি জ্বলছিলো। পাশের জুতা রাখার নির্ধারিত স্থানে জুতা রেখে ওপরের দিকে উঠলাম।সিড়ি ধরে দোতলায় উঠলে চোখে পড়বে এক প্রশস্ত বারান্দা।দালানের পিলারগুলো আরবি হরফ দিয়ে সুসজ্জিত করা।বারান্দার ডানপাশে রয়েছে কয়েকটি হলকক্ষ। হলকক্ষের একদম কোনায় সাত ধাপবিশিষ্ট কাঠের তৈরি একটি মিম্বর,এটিকে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।এর ঠিক ওপরে লাল রঙের চাদর দিয়ে বেধে দেয়া হয়েছে। সামনের অংশে বিভিন্ন রঙ যেমন লাল,কালো,জলপাই ইত্যাদি রঙের ধর্মীয় প্রতীক ঝুলানো আছে। প্রত্যেক কাপড়ের ওপর আরবি হরফ লিখা রয়েছে। এই মিম্বরকে ঘিরে বহু মানুষ বসে প্রার্থনা করছেন,অনেকে সিজদাহ করছেন।এই মিম্বরের পাশের কক্ষে একটা সিংহাসন এবং সেটাও কালো কাপড় দিয়ে ঘেরাও করা। সাধারনত হোসেনের মৃত্যুতে দুঃখ ও শোক প্রকাশের প্রতীকি হিসেবে কালো রঙের কাপড় ব্যবহৃত হয়েছে।পুরোটা কক্ষ রাজকীয় ঝাড়বাতি ও আলোকসজ্জায় সজ্জিত।  হলঘরের শেষপ্রান্তে মহিলাদেরদের নামাদের ব্যবস্থা করা আছে। ভবনের সম্মুখ প্রান্তে তিন ঘাটবিশিষ্ট একটি পুকুর রয়েছে। বর্তমানে এখানে মাছের চাষ করা হয়।

মুহররম মাসের ১ থেকে ১০ তারিখ হোসেনী দালানকে ভিন্নরূপে সুসজ্জিত করা হয়।আশুরার দিনে এখান থেকে বিশাল বড় মিছিল বের হয়। শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে শোকের মাতম করতে থাকেন এবং নিজেদের গায়ে আঘাত করতে থাকেন।শহরের প্রধান প্রধান ফটকগুলি প্রদক্ষিন শেষে এই তাজিয়া মিছিল সমাপ্ত হয়।হোসেনী দালানের একপাশে কবরস্থান রয়েছে। সেখানে শিয়া সম্প্রদায়ের বহু ব্যাক্তিবর্গকে মাটি দেয়া হয়েছে। প্রতিটা কবরের ওপরে ফুল রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্য ছাড়া ভিতরে প্রবেশ করা যায়না। পুরোটা জায়গা যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন। অনেকেই নিজের মনের বাসনা পূরন করতে এখানে আসেন। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের শিয়া গোষ্ঠীদের আগমন ঘটে এখানে। বর্তমানে পুরোনো আমলের কোনো চিহ্নই নেই বাড়িটিতে। বারবার সংস্কারের ফলে এটি নতুনের মত ঝকঝক করছে এখনও। 

হোসেনী দালান ভ্রমনে সতর্কতা ও টিপস-

১)এটি একটি ধর্মীয় উপাসনালয় তাই এমন কিছু করা যাবেনা যাতে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে।

২) মাজারে প্রবেশের পূর্বে অবশ্যই জুতো নির্দিষ্ট স্থানে রেখে প্রবেশ করতে হবে।

৩)যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা যাবেনা।

৪)ভেতরে অনেকেই প্রার্থনা করেন।তাদের প্রার্থনায় ব্যাঘাত ঘটে এমন কোনো কার্যকলাপ করা থেকে বিরত থাকুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top